Monday, 29 August 2016





অধ্যায় ৪


তিয়াস চলে গেছে অনেকদিন হয়ে গেল । অংশুর সাথে সামনাসামনি দেখা হয়নি ঠিকই কিন্তু এক অদৃশ্য অস্পষ্ট বাঁধনে নিজেকে এমনভাবে বেঁধে ফেলেছিল যে বার বার অনবরত তার মনে হত তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে তিয়াস । এই শহরে থাকতে অংশু যেন তাকে স্পর্শ না করেও খুব গভীরভাবে অনুভব করতে পারত তাকে যেটা এখন সে পারছেনা । এমনি করেই দিন চলতে থাকল আর তিয়াসের প্রতি অংশুর টান দিন দিন বারতে থাকল । অংশু যেন কথা বলতে ভুলে যাচ্ছিল । আর কলেজে তার সদ্য ব্যর্থ হওয়া প্রেম তাকে আরও একঘরে ঠেলে দিছিল । পুরনো চাল যেমন ভাতে বারে তেমনি নতুন প্রেমের বার্থতা পুরনো প্রেমটা আরও পুরনো করে বর্থতার আয়তন টা বাড়িয়ে দিচ্ছিল । আইটি সেক্টরের চাকরিজীবিদের যেমন শরীর অফিসে কিন্তু মন পড়ে থাকে ঘরে ঠিক সেরকম অংশুর শরীর বিভিন্ন ভাবে অংশুকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলেও মনের চোখ কিছুতেই তিয়াসের মুখের থেকে সরাতে পারলনা ।

নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য অংশু সিলেবাসের পড়া ভাল লাগতনা বলে নতুন নতুন জিনিসে আগ্রোহী হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে থাকল । বন্ধুদের সাথে আড্ডা , ঘুরতে বেরন আস্তে আস্তে অনেকটা কমে গেল আগের থেকে আর হঠাৎ অংশুর এরকম স্বভাব সবাই ঠিক মেনে নিতে না পারলেও কেউ কিছু বলতনা কারন অংশুর কলেজের প্রেমের গলপের রসের মিষ্টতার পরিমান কারোর বিশেষ অজানা ছিলনা । আর অংশুর এই উদাসিনতায় সবথেকে বেশি মন খারাপ ছিল সেই মানুষটি যাকে অংশু নিজের অজান্তেই একটু অন্যভাবে ভালবেসে ফেলেছিল ।

একদিন সন্ধেবেলা কলেজের বাস থেকে নেমে বাড়ির পথে পা বাড়িয়েছে অংশু । ফোন টা বেজে উঠল এবং সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে গেল । প্রথমে কলার টিউনের ফোন ভেবে বের করলনা কিন্তু একটু পরেই কার ফোন জানার কৌতুহলে ফোন বার করে দেখল মিসড কলের তালিকায় তিয়াসের নাম । কিছুক্ষনের জন্য দাঁড়িয়ে অনেক কিছু ভাবতে লাগল অংশু । খুশির মাত্রা এতটাই ছিল যে কি করবে বুজতে পারছিলনা আর ওই সময়ে তাকে কেউ দেখলে বলত ও নিশ্চই ভুত দেখেছে । যাই হোক , অনেকদিনের সাধনার পর ভগবান উপস্থিত হলে কি বর চাইবে সাধক যেমন তাড়াতাড়ি ঠিক করতে পারেনা তেমনি অংশুও ঠিক করতে পারছিলনা ফোন করে কি বলবে । প্রায় দুই মাস হয়ে গেছে কোন খবর নেই তাই অংশুর একটু রাগও ছিল মনে মনে কিন্তু সেই রাগটা রাগের মত করে প্রকাশ করার মানষিকতা তিয়াসের একটা মিসকল যেন ফু দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল অনেক দূরে ।

অংশু : “ হ্যালো !! ”
তিয়াস : “ হ্যা হ্যালো ! শুন্তে পাচ্ছিস ? ”
অনেকদিন পর তিয়াসের গলা শুনল অংশু । আর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল এই মেয়ের ওপরে কি করে রাগ করা যায় !
“ হ্যাঁ বল, কেমন আছিস ? ওখানে গিয়ে তো ভুলেই গেছিস মনে হয় । ”

রাগ অভিমানের পালা শেষ হতে বেশি সময়য় লাগলনা । পনেরো টা মিনিট পেরিয়ে গেছে , বাড়ির কাছাকাছি চলে এসে অংশু আবার ঘুরে অন্য রাস্তা ধরল যাতে আরও কিছুক্ষন কথা বলা যায় । একসময় দুজনেই কোন কথা খুঁজে পেলনা , চুপ করে থাকল। নিরবতা ভেঙ্গে তিয়াস হটাৎ জিগেস করল
“ তোকে একটা কথা জিগেস করব ? ”
“ হুম কর না ।  ”
“ না সেরকম কিছু না , বলছিলাম কবিতাটা কি আমাকে নিয়ে লিখেছিস ? না আমার নামটা শুধু ব্যবহার করেছিস ? ”
প্রশ্ন শুনে অংশু একটু হাসল । যেন এই রকমই একটা প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল সে ।
“ আরে পুরো কবিতাটাই শুধু তোকে নিয়ে লিখলাম আর তুই বুঝতেই পারলিনা ! তুই কি রেগে আছিস ? ”

আচমকা রেগে থাকার প্রশ্নে কিছুটা আশ্চর্য হয়ে উঠল তিয়াস ।
“ নারে রাগব ক্যানও ! ”

দুজনেই আবার চুপ । নিরব হয়ে দুজনেই যেন সত্যিটা দুজনের মত করে ভাবছিল কিন্তু কিছু বলতে পারছিলনা । শুধু কিছু শোনার অপেক্ষা করছিল ।
বেশ কিছুটা সময় অপচয় এর পর তিয়াস ফোন রাখার আবেদন করল । অংশুর ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু নিজের ওজন বজায় রাখার জন্য তিয়াসের আবেদনে সম্মতি জানাল । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে খুব জোড়ে পা বাড়াল বাড়ির পথে ।

আরও কিছুক্ষন কথা বলার ইচ্ছে ছিল অংশুর , বলার মত কথা হয়তো শেষ হয়েই গেছিল কিন্তু তবুও ফোনের ওপার থেকে তিয়াসের নিস্বাস প্রস্বাস এর আওয়াজটা আমৃতের মত আস্বাদন করত , আরও কিছুটা সময় তিয়াসের চুপ করে থাকাটা অনুভব করত , যাই হোক ইচ্ছের গন্ডিটাকে না বাড়িয়ে এক্টুখানি ছোট করে রেখে ঘরে ফিরল সে । মনের ভিতরের খবর বাইরে যাতে প্রকাশ না হয় তার প্রাণপন চেষ্টা করতে লাগল । কিন্তু চোখে মুখে এক উদাসিনতার ছাপ খুব সামান্য হলেও ফুটে উঠছিল । সন্তানের মনের পরিবেশ আঁচ করতে মায়েদের বেশি সময় লাগেনা । বেশ কিছুক্ষন পরে হঠাৎ অংশুর মা জিগেস করল “ কিছু হয়েছে নাকি রে তোর? “

হঠাৎ এই প্রশ্নে চমকে উঠল , মনে মনে স্বিকার করল যে মায়ের কাছে কিছু লুকনো প্রায় অসম্ভব । কোনরকমে প্রশ্নটাকে এড়িয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল । ল্যাপটপ খুলে শান্তিনিকেতন থেকে তোলা যে ছবিটা অংশুকে পাঠিয়েছিল তিয়াস সেটা এডিট করবে ভাবল , ছবিটাতে তিয়াসের গালে আবিড় লেগেছিল আর ঘারটা একটুখানি হেলিয়ে হাসছিল তিয়াস । আবিড়্গুলো তিয়াসের মিষ্টি হাসির মিষ্টতা আরও একটু বাড়িয়ে দিচ্ছিল যেন । অনেক্ষন ধরে অংশু ছবিটার দিকে তাকিয়েই ছিল । চোখের কোনে জল বার বার অংশুকে ভালবাসা থেকে দূরে থাকার চেষ্টাকে ব্যর্থ করছিল । অংশু আগেই বুঝতে পেরেছিল তিয়াসের সাথে তার সম্পর্কটা বন্ধুত্বের সীমানা পার করে গেছিল কিন্তু সে অবুঝ হবার চেষ্টা করত । কিন্তু আর পারলনা , তিয়াসের প্রতি এই শক্তিশালি টান টা সে অস্বিকার করতে পারলনা কিছুতেই ।
মন খারাপ হয়ে গেলে রবী ঠাকুরের গানই ছিল অংশুর একমাত্র আহার । সে তাই করল , হেডফোন টা কানে লাগিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুন্তে থাকল ‘ সহেনা যাতনা ’ ।

মা ডাকতে ঘুম ভাংল । গান চলছেই , চোখ বন্ধ থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতে পারেনি । সূর্য তার কাজ শেষ করে দিগন্তের ওপারে চলে গেছে , রাত্রি নেমেছে আবার । মা ডাকছিল অনেক্ষন থেকেই , আওয়াজ না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখে অংশু চেয়ারে বসে বসেই ঘুমাচ্ছে ।
উঠেই ফোনটা দেখল কোন মেসেজ এসেছে নাকি , না কোন মেসেজ নেই । আসলে তিয়াসের মেসেজ এলে একমাত্র ওইটাই অংশুর মেসেজ বলে মনে হয় , আরও হয়ত অনেকেই মেসেজ করেছে , তাদের পরে উত্তর দেবে বলে ফোনটা রেখে দিল টেবিলের ওপরেই । ফোনের প্রতি যে আকর্ষন টা ছিল সেটা কোথায় যেন নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে । ফোন কোথায় থাকে অশুর হুঁশ থাকেনা , বাইরে গেলে ফোন নিতে ভুলে যায় , আর ফোনের আলো বারে বারে জ্বালানো বন্ধ করতে থাকে আর দেখে তিয়াসের কোন মিসকল বা মেসেজ আছে কিনা ।

মাসগুলো একে একে পেরোতেই থাকল , অংশুর ওষুধটাই নতুন করে অসুখ তৈরি করতে থাকল এবার । নিজেকে আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলতে লাগল এবং পুরোন অতীতের থেকে দ্বিগুন হারে অংশুর মন ভাংছিল । কলেজ , ক্লাস , বন্ধু , আড্ডা , ক্যান্টিন সবই ছিল , অংশুও ছিল সবকিছুর সাথে কিন্তু ওর আত্মা টা ছিলনা । ওর সবসময় মজা করা , খুব গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে লোককে হাসানো , ইচ্ছে করে বন্ধুদের বিরক্ত করা , খুনসুটি , এসব যেন ভুলেই গেছিল একেবারে । ওর কাছের বন্ধুরা পুরোন অংশুকে বারে বারে ফিরে পাবার জন্য অনেক কিছু করত , মজা করার চেষ্টা করত কিন্তু অংশুর হাসি কিছুক্ষনের মধ্যেই থেমে যেত । অংশু আবার সেই খুব চেনা পুরোন দিনগুলতে চলে যাচ্ছে দেখে তার সেই সবথেকে কাছের বন্ধুটি খুব কষ্ট পেত আর অংশুকে বোঝাবার চেষ্টা করত , কিন্তু অংশু খুব ভাল আছে ঠিক আছে বলে এড়িয়ে যেত বারে বারে ।

ফাইনাল ইয়ার ; প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে । কলেজে কম্পানি আসাও শুরু করেছে । তিনটে চাকরির ইনটারভিউ তে অংশু পাস করতে পারলনা । কিন্তু ওর অনেক বন্ধুই সেই পরীক্ষায় পাস করে চাকরি পেয়ে গেছিল ।
এ যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া । অংশু অতিষ্ট হয়ে উঠেছিল একের পর এক আঘাত পেতে পেতে , শহর ছেড়ে এমন কি পশ্চিমবঙ্গটাই ছেড়ে চলে যাবার জন্য উঠেপড়ে লাগল । পরীক্ষার জন্য খুব মন দিয়ে পড়বে বলে প্রতিদিন বই নিয়ে বসত , কিন্তু বইএর থেকে তার মন বেড়িয়ে পালাতে এক্টুও বেশী সময়য় লাগাতনা । কিছুক্ষন পড়ার পর অংশু আর মন বসাতে পারতনা । মনকে সে যত আটকাবার চেষ্টা করত তত দ্রুত তিয়াসের কাছে পৌঁছে যেত সে , তাকে ধরে রাখতে পারতনা অংশু ।

ফেবরুয়ারি মাস ২০১৬ , একটা কম্পানি এল কলেজে পরীক্ষা নিতে । পরীক্ষার প্রস্তুতি খুব একটা ছিলনা এবং খুব নামকরা কম্পানি না হওয়ায় অতটা গুরুত্বও দিলনা অংশু , পরীক্ষার দিন খেলার ছলে পরীক্ষা দিতে গেল অংশু । কিন্তু ওইযে কথায় আছে ‘ যাহা চাই তাহা পাইনা , যাহা পাই তাহা চাইনা ’ ঠিক এই রকমই ঘটনা টা ঘটল । হিসেব মত প্রস্তুতি ভাল না থাকলে পরীক্ষা ভাল হয়না । সেইরকম অংশুর এই পরীক্ষাটাও ভাল হলনা । পরীক্ষার শেষে ক্যান্টিনে খাবার খেতে খেতে পরীক্ষা দেওয়ার মান নিয়ে আলোচনা করছিল অংশুরা , বলা বাহুল্য অর সাথে বাকি যারা ছিল তাদের অবস্থাও অংশুর সমতুল্য ছিল এবং নিজেদের মান যে কম নয় সেটা নিজেদেরই বোঝাবার জন্য পরীক্ষার প্রশ্নগুলোকেই ওরা অনেক নিম্নমানের বলে তুলে ধরার চেষ্টা করতে থাকল ।

অংশুর খাওয়া প্রায় শেষ , একটা ফোন এল । ওরই এক বন্ধুর ফোন ছিল এবং খবরটা ছিল পরীক্ষায় পাস এর তালিকায় অংশুর নাম দেখা গেছে । কথাটা শুনে প্রথমে খুব অবাক হল বটে কিন্তু এটা যে কখোনই সত্যি হতে পারেনা এটাই বার বার ই বন্ধুকে বোঝাবার চেষ্টা করতে থাকল । পরীক্ষার ফলাফল নিজের চোখে দেখার জন্য পরীক্ষার হলে যেতেই সে বুঝল সত্যিই সে পাস করাদের মধে একজন । তালিকায় ত্রিশ জনের নাম ছিল যারা দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছেছিল । অংশু মনে মনে খুব হাসল । সে ভাবল যদি তিয়াসের মনের কথাটাও ঠিক এইভাবে যানতে পারত আর সেই কথাটা যদি অংশু যেমনটা ভাবে সেইরকম হতো তাহলে অংশুর এই ভাললাগার সিমানাটা হয়তো আরও অনেকটাই বিস্তার লাভ করত ।
যাই হোক সেই ত্রিশ জনের মধ্যে আটজন চাকরিটা পেল  আর ভাগ্যবশত অথবা দুর্ভাগ্যবশত অংশু ছিল সেই আটজনের মধ্যে একজন। এতো কঠিন একটা পরীক্ষা এতো অনায়াসে পাস করে চাকরি পাওয়া যেতে পারে এটা বিশ্বাস করতে অংশুর বে কিছুটা সময় লেগেছিল এবং কিছুটা হলেও মনটা খুশি হল । শহর ছাড়ার ইচ্ছেটা এত তাড়াতাড়ি পূর্ণ হয়ে যাবে অংশু ভাবতে পারেনি ।


এক সপ্তাহের মধ্যেই কোলকাতায় চলে যেতে হবে , ট্রেনিং শুরু হয়ে যাবে পরের সপ্তাহ থেকেই । সময় খুব কম । চাকরি পাওয়া , কোলকাতায় ঘর খোঁজা ইত্যাদি করতে করতে পুরো সপ্তাহটা জুড়ে একটু অন্যরকম ভাবেই কাটল অংশুর । প্রথমে চাকরির আনন্দে মেতে থাকলেও তিয়াসকে কিন্তু এতো ব্যস্ততার মধ্যেও ভোলেনি । প্রথমেই তাকে মেসেজ করে জানান হয়ে গেছে চাকরি পাওয়ার কথা । তারও কোন উত্তর অংশু পেলনা । তিয়াসের থেকে উত্তর না পাওয়াটা আস্তে আস্তে অভ্যেস হয়ে গেছিল । শুধু এটাই বুঝতে পারছিলনা যে , যে মানুসটা ঠিক করে খেয়েছে কিনা জিগেস করার জন্য ফোন করত তাকে , শরীর খারাপ হলে বার বার খোঁজ নিত , কি করছে কেমন আছে বারে বারে যানতে চাইত তার হঠাৎ এ কি হল , না আছে ফোন না কোন মেসেজ , এমন কি ফোন করলেও ব্যস্ত থাকার অযুহাতে কথা বলা থেকে এড়িয়ে যেতে থাকে , পরে ফোন করবে বলে ফোন রেখে দেয় কিন্তু সেই সময় আর আসেনা যখন অংশুর ফোনে তিয়াস নামটা ভেসে ওঠে ।
অংশু ঠিক করেছিল ও নিজে থেকে যদি কথা না বলে তাহলে ও কথা বলবেনা । তাই মেসেজের মাধ্যমে যেটুকু কথা প্রশ্নোত্তরের মত হতো সেটা অংশু বন্ধ করে দিয়েছিল ।

অংশু কোলকাতায় চলে গেছে , চাকরিজীবি হয়ে ওঠার দরজা খুলে দিয়েছিল সে । প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হলেও এক নতুন লক্ষ্যের দিকে নিজেকে নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত করতে থাকল । কোলকাতায় আসার কিছুদিন পরেই তিয়াসের উত্তর অংশু পেয়েছিল এবং ফেসবুকের দৌলতে তাদের কথোপকথন খুব কম হলেও আবার লতে শুরু করল । কিন্তু অংশুর বার বার মনে হতে থাকল এই তিয়াস আগের তিয়াস নয় । কিন্তু কথা বলত কারন , আলোর প্রেমে কীট-পতঙ্গের আগুনের কাছে যেতে চাওয়া তাদের জীবনের থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে । তিয়াসের সাথে কথা না বলে অংশু এক মুহুর্ত থাকতে পারতনা , তিয়াসের গলা শোনার জন্য ছটফট করত সে ।
প্রায় একমাস হয়ে গেছে অংশু কোলকাতায় আসা । এই সপ্তাহের শেষে ছুটিতে বাড়ি যাবে ঠিক করল অংশু । অফিস থেকে ফিরে রাত্রে ফোন করল তিয়াসকে । ফোনের প্রত্যেকটা রিং অংশুর মনে একটাই আশঙ্কার কথা ভাবাচ্ছিল , তিয়াস যদি আবার অমনি করে এড়িয়ে যায় , যদি ঠিক করে কথা না বলে ।

তিয়াস - “ হ্যাঁ হ্যালো ! কিরে শুন্তে পাচ্ছিস? কেমন আছিস ?

অংশু - “ হ্যাঁ , এই চলে যাচ্ছে তবে একটু নতুনভাবে । তুই কেমন আছিস? এখন কি কথা বলতে পারবি না ব্যস্ত আছিস ? আমার সাথে এখন কথা বলার তো তোর সময়ই নেই । ”

তিয়াস বুঝতে পারল অংশু বেশ রেগে আছে , জিগেস করল “ তুই আমার ওপর রেগে আছিস ? ”

সত্যি অনেকদিনের রাগ জমে ছিল অংশুর মনে , ওর ইচ্ছে করল সমস্ত রাগ উগরে দিয়ে ফোন টা রেখে দিতে । কিন্তু পারলনা , এমনকি গলার আওয়াজও চড়লনা এক্টুও বরং আওয়াজের মধ্যে ভালবাসা আরও বেশি করে ফুটে উঠল নিজের অজান্তেই ।
সে বলল “ না রেগে থাকব ক্যানও ? রেগে নেই তবে হ্যাঁ খুব খারাপ লাগে তুই আমার সাথে আগের মত আর কথা বলিসনা । ”

“ কই কথা বলিনা এই তো বলছি । ”

“ ছাড় তোর সাথে তো কথায় পারা যাবেনা , কেমন আছিস ? ”

কথোপকথোন চলতে থাকল অনেক্ষন । অংশুর সমস্ত রাগের অস্তিত্ব শেষ করে দিয়েছিল তিয়াস । ওইরাত্রে অংশু এতোটাই খুশি হয়েছিল যা প্রথম চাকরি পেয়েও হয়নি । ঘন নীল আকাশের গায়ে সাদা দৃঢ় বিন্দুর মত তারাদের দেখতে দেখতে একটা সিগারেটে আগুন দিল । ফুরফুরে হাওয়ায় সিগারেটের ধোঁয়া এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়তে লাগল আর অংশু নিজের মনে হাসতে থাকল ।

ছুটিতে বাড়ি এসেছে । বাবা মা সবাই খুব খুশি । যেটা হয় আর কি , মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির বড় ছেলে চাকরি পেয়ে এক মাস পর বাড়ি এলে । বিকেল বেলা অংশু সাইকেল নিয়ে বেড়োল বন্ধুদের সাথে দেখা করতে , অনেকদিন দেখা হয়নি , অনেকদিন চায়ের আড্ডা হয়নি একসাথে । ঠিক করল সুমনের বাড়ি যাবে । বাইরে বেরিয়েই মনে হল তিয়াস কে ফোন করবে । ফোন করল । আজ বেশি দেরি হলনা তিয়াসের ফোন ধরতে আর তিয়াস এড়িয়েও গেলনা । সাইকেল চালাতে চালাতে কথা বলতে থাকল অংশু । অংশুর সাথে তিয়াসের কথা বলতে খুব ভালোলাগত । তিয়াস বলত অংশুর আওয়াজে জাদু আছে যা তিয়াসের মন খুশিতে ভরিয়ে তোলে । সেদিনও আবার ওই কথাই বলছিল তিয়াস । সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিল , কিন্তু সব কিছু ঠিকঠাক চলুক ভগবানও যেন চাননা । কথাপ্রসঙ্গে তিয়াসের মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল তার কলেজে ছুটি চলছে এবং সে বাড়িতে এসেছে যখন অংশু কোলকাতায় ছিল । অংশুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে উঠল , সব খুশী আবার যেন কোন নিরুদ্দেশে হারিয়ে যেতে থাকল । বাড়ি আসার আগে তিয়াসের সাথে কথা হয়েছে , অনেকবার কথা হয়েছে কিন্তু তিয়াস বাড়ি ফিরেছে এই কথাটা অংশুকে লুকিয়ে গেছিল । ও বাড়ি এসেছে জানতে পারলে আবার দেখা করার কথা বলবে অংশু যেটা তিয়াস করতে পারবেনা এবং অংশুর খারাপ লাগবে এই ভেবে তিয়াস তার বাড়ি আসার কথাটা অংশুকে ইচ্ছে করে বলেনি
অংশু একদম চুপ করে গেল , তিয়াস ভুল স্বিকার করে অংশুকে রাগ করতে বারন করল । অংশু কি বলবে বুঝতে পারছিলনা । অংশু এটা একেবারেই ভাবেনি যে তিয়াস ওর বাড়ি আসার কথাটা তাকে বলবেনা এবং তার কারন ও তিয়াসের সাথে দেখা করতে চাইবে । এটা কিছুতেই মানতে পারছিলনা সে । ইতিমধ্যে সাইকেলের স্পিড টা বেড়ে গেছে গড়ান রাস্তা থাকায় । বাইরের জগৎ থেকে অংশু আলাদাই হয়ে গেছিল যেন , তিয়াসের আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুন্তেই পাচ্ছিলনা ওই সময়ে ।


একটা প্রচন্ড জোড় হর্নের শব্দে অংশু ঘার ঘোরাল , হর্ন অনেক্ষন থেকে বাজছিল কিন্তু অংশু শুন্তে পায়নি ।  কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচন্ড জোড় ধাক্কায় সাইকেল থেকে ছিটকে পড়ল রাস্তায় , কানের ঠিক ওপরে মাথাটা ফেটে গেল , উল্টদিক থেকে একটা পিকয়াপ ভ্যান খুব জোড়ে আসছিল , ড্রাইভার সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্রেক কষল কিন্তু দূরত্ব এতো কম ছিল যে ঠিক জায়গায় গাড়িটা না দাঁড়িয়ে অংশুর পায়ের ওপর দিয়ে চলে গেল , অচৈতন্য দেহটা ঘুড়ে গিয়ে চিৎ হয়ে গেল । মাথার ওই ফেটে জাওয়া জায়গাটা থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত গাল বেয়ে রাস্তার কালো রংটা একটু একটু করে লাল করতে লাগল






PREVIOUS CHAPTER                                                                                  NEXT CHAPTER





COPYRIGHT© : This story is written by Nilangshu Chatterjee and it’s his property . Copying this or doing anything without permission of Nilangshu Chatterjee will be treated as violation and Nilangshu Chatterjee has all rights to take legal step .  ** All the characters , names , places , dates , situations , incidents etc are imaginary . 

Related Posts:


1 comment:

Join With Us

New philosophy of Poems of Love

New philosophy of Poems of Love
NIL KOBITAR KHOJE

Total Pageviews

12850

Followers

POET behind the popularity

POET behind the popularity
AWAKEN DREAM

Jawl Phoring By Anupam Roy Original Track

Popular Posts