Sunday, 2 October 2016




                                                                   অধ্যায় ৫


সময়ের সাথে যুদ্ধে মানুষ যে একেবারেই পারদর্শী নয় তা বার বার বিভিন্নভাবে সময় প্রমান করেছে এবং আবারও করল কিছুক্ষন আগে যে মনে মনে তার নিজের তৈরী ভবিষ্যতের ছবি কল্পনা করে হৃদয়ের কলসী সীমাহীন আনন্দ দিয়ে পরিপুর্ণ করে ফেলেছিল, ক্ষনিক পরে সেই পূর্ণ কলসী চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ক্ষনকাল আগের সময়টিকে নিল ছিনিয়ে
এবার যদি প্রশ্ন করা হয় কে? অনেকের মনে তিয়াসের নামটাই আসবে কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলে উত্তরটা হবে সময় যাই হোক দোষ-গুনের বিচারে আমরা না হয় নাই গেলাম

সুমনদের বাড়ি যাবার জন্য একটা চারমাথা মোর পার করতে হয় আর ই রাস্তাটা খুব ব্যস্ত থাকে সবসময় । সেদিনও কিছু ব্যতক্রম ছিলনা । অংশুর এক হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল আর এক হাতে ছিল ফোন । সচরাচর খুব সাবধানি হলেও সেদিন তিয়াসের মুখ থেকে ভুল করে বেড়িয়ে জাওয়া সত্যি কথায় অংশুর সব সাবধানি হবার প্রতিবর্ত ক্রিয়া কিছুক্ষনের জন্য হলেও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল ।

এই সামান্য এক কথায় অংশু এইভাবে আকষ্মিক অন্যমনষ্ক হয়ে ওঠার কারন প্রেম আর বিশ্বাস সে প্রেম হয়ত শুধু অংশুরই ছিল কিন্তু এতোদিন ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা যে বিশ্বাসটা ভঙ্গুর হয়ে উঠছিল, এই ছট্টো আঘাতে ভেঙ্গে পড়ল একেবারে কিছুদিন পর হয়ত আবার অন্তহৃত ক্ষুদ্র ভালবাসার সেলোটেপ দিয়ে ভেঙ্গে জাওয়া বিশ্বাস জুড়ে নিত তারা কিন্তু সেই সুযোগের আগেই অংশু রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে বেশকিছুক্ষন হয়ে গেছে বেশ ভিড় জমে গেছে রাস্তায় কিছু লোক গাড়ির ড্রাইভার কে ধরে রেখেছে , সে সবাইকে বোঝাবার চেষ্টা করছে তার দোষ নেই , কিন্তু কেউ তা মানতে চাইছেনা পুলিশ ও এসে গেছে, এ্যাম্বুলেন্স আস্তে দেরি করছে দেখে পুলিসের গাড়িতেই তারা তুলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে জোড়ে গাড়ি ছুটিয়ে দিল

রক্তের বোতল থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত পাইপ দিয়ে ঢুকছে অংশুর হাতের ধমনি দিয়ে মাথায় ব্যান্ডেজের একপাশটা এক্টু লাল হয়ে আছে এখনও ডান পায়ে প্লাস্টার সাড়া দেহে ক্ষতের অভাব নেই তবে চাদর দিয়ে ঢাকা থাকায় সেসব দেখা যাচ্ছেনা ১২ ঘন্টা  পার হয়ে গেছে, এখনও চোখ বন্ধই আছে অংশুর অংশুকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে তার সেই বন্ধুরা যাদের সে সবথেকে কাছের বলে ভাবে, অংশুর মাকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছে তারা একটু একটু করে হাসপাতালের ওই ঘরটা ভরে যেতে শুরু করল, যে যেখান থেকে খবর পাচ্ছে সেই চলে এসেছে, অংশুর বন্ধুতেই গোটা ঘর টা ভরে গেল এবং বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিল, আর ঢুকতে দিচ্ছিলনা হাসপাতালের কর্মিরা

তখন প্রায় সকাল হয়ে উঠেছে রাত্রে হাস্পাতাল থেকে কাউকে বের করতে পারেনি কর্মিরা অনেক চেষ্টা করেওহটাৎ
অংশুর চোখের পাতা নড়তে দেখেই রিতিকা চিৎকার করে উঠল অংশুর জ্ঞ্যান ফিরেছে বলে এই সেই অংশুর কলেজের প্রেম, চিৎকার করে একটা নার্সকে ডেকে নিয়ে এল নার্স এসে আস্তে আস্তে ডাকল অংশু শুন্তে পাচ্ছ? অংশু?”
রিতিকা চেঁচিয়ে উঠল এই অংশু ওঠ না, এই অংশু!”

চোখের পাতা খুব আস্তে আস্তে চোখের ওপর থেকে উঠল চোখ খুলেই রিতিকার হাসিমুখ ছিল সামনেই, আস্তে আস্তে চারিদিক তাকিয়ে দেখল তার সেই প্রিয়জন গুলো সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অংশু মাঝে মাঝে ভাবত তার যদি খুব বাজে কিছু হয় তখন যাদের তার কাছের বলে ভাবে তারা থাকবে তো পাশে , প্রশ্ন চিহ্ন থেকেই যেত আজ সবাইকে পাশে দঁড়িয়ে থাকতে দেখে হয়তো খুব খুশিই হয়ে উঠেছিল আবেগ প্রকাশ করতে চাইলেও প্রকাশ করার শক্তি ছিলনা তার কিছু বলতে চাইল কিন্তু পারলনা কথা জড়িয়ে গেল চোখের কোণ বেয়ে শুধু জল গড়িয়ে শুধু বালিশ ভেজাল অংশুর মা ওর মুখে হাত বোলাতে বোলাতে অঝরঝরে কাঁদতে শুরু করে দিল।

এদিকে ফোন টা হঠাৎ কেটে জাওয়ায় তিয়াস ভাবল অংশু রেগে ফোন কেটে দিয়েছে তিয়াস অনেকবার ফোন করল কিন্তু বারে বারে একটা রেকর্ড সুইচ অফ সুইচ অফ বলে যেন অংশুর রাগ প্রকাশ করছিল ফোনটা পুলিশরা নিয়ে এসেছিল কিন্তু ব্যাটারি লাগিয়ে অন করেনি বেলা অনেকটাই গড়িয়ে গেছে, ডাক্তার একবার দেখে গেছে এবং সেরকম ভয়ের আর কিছু নেই, শুধু মাথার কিছু পরীক্ষা করতে হবে বলে গেছেন খুব আস্তে আস্তে অংশু কথা বলতে পারছে, তবে আওয়াজ এতোটাই কম যে মুখের কাছে কান নিয়ে গিয়ে শুন্তে হচ্ছে কথা রিতিকার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইল , রিতিকা অংশুর মুখের কাছে কান নিয়ে গেল অংশু ওকে ফোন টা ঠিক আছে কিনা জিগেস করে অন করতে বলল ফোনটা রিতিকার কাছেই ছিল, সে সুইচ টিপতে আলো জ্বলে উঠল ফোনে অনেকগুলো মিসড কল ছিল এবং সবগুলো ছিল তিয়াসের, রিতিকা যেন এই দুর্ঘটনা কল্পনা করতে পারছিল মুখে একটু রাগের আভাস অংশু দেখতে পেল রিতিকা ফোনের স্ক্রীন অংশুর চোখের কাছে নিয়ে গেল অংশু রিতিকার মুখ দেখে আগেই বুজতে পেরেছিল, তাও ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল তিয়াসের অনেকগুলো মিসড কল এবং আজকেও কল করেছিল।

আশীষ, সিদ্ধার্থ রা অংশুর বাবা মাকে জোড় করে বাড়ীতে বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে নিজেরা অসুধ পত্র নিয়ে আলোচোনা করছিল। রিতিকা ডাকল আসীষ কে অংশুর কাছে আসার জন্য। আসীষ অংশুর মুখের কাছে এলে অংশু আস্তে আস্তে অনেক কিছু বলল। কিছুক্ষন পরে আসীষ কাউকে কিছু না বলে বেড়ীয়ে গেল হাসপাতাল থেকে।
অংশুর বাড়ি এল সে। অংশুর ঘরের সবথেকে ওপরের তাক থেকে একটা কাগজের বাক্স নিচে নামাল। বাক্সটা খুলতেই একদম ওপরেই দেখতে পেল একটা বাদামী রঙের খাম, অনেক কিছু কবিতাকারে লেখা তাতে। খামটা হাতে নিয়েই বুঝতে পারল ভিতরে কিছু আছে। খাম আঠা দিয়ে বন্ধ ছিল, আশিষ সেটা খুললনা। খামটা পকেটে ভরে বেড়ীয়ে গেল ঘর থেকে।

তিয়াসের বাড়ি আশিষরা চিনত। অনেকবার জোড় করে অংশুকে তিয়াসের বাড়ির পাশ দিয়ে নিতে যেত ওরা।
বাইক থেকে নেমে বেল বাজাল আশিষ। একজন মাঝ বয়েসি ভদ্রমহিলা দরজা খুললেনতিয়াসের সাথে মুখের মিল আছে দেখে আশীষ বুঝল উনিই তিয়াসের মা।
একটু হেসে আশিষ বলল “কাকিমা তিয়াস বাড়িতে আছে? একটু ডেকে দিন না!”
ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে আপাদমস্তক দর্শণ করে আশিষ কে জিগেস করলেন “তুমি কে?”
“আমি তিয়াসের বন্ধু, একটু ডেকে দিন না কাকিমা খুব দরকার, আমার একটু তাড়া আছে।”
একটু ভেবে তিয়াসের মা আশিষের নাম জিগেস করে ওকে দাঁড়াতে বলে ভেতরে গেল। কিছুক্ষন পরে তিয়াস তাড়াতাড়ি বাইরে এসেই থমকে দাঁড়াল।
আশিষ একটু অলীক হেসে বলল “ ভয় পেওনা, তুমি আমার নাম শুনে বুঝতে পারবেনা বলে তোমার মাকে আমার নাম অংশু বলেছিলাম, আমার নাম আশীষ। একটা কথা বলার জন্য তোমার কাছে এসেছি।”
তিয়াস প্রচন্ড আশ্চর্য হয়ে কি কথা জিগেস করল।
“কাল বিকেলে অংশুর এক্সিডেন্ট হয়েছে, এখন হাসপাতালে, আজ সকালে জ্ঞ্যান ফিরেছে। তোমার...”
কথা বলতে বলতে থেমে গেল আশীষ তিয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে। তিয়াসের চোখ মুখ একদম পাথরের মুর্তির মত হয়ে গেছে আশীষের কথা শুনে।
আশিষ তাকে তাড়াতাড়ি বলল “ আরে এখন অংশু ভাল আছে, ভয়ের কিছু নেই, ডাক্তার বলেছে চিন্তার কিছু নেই। আজ তোমার বাড়ি ওর আদেশ পালন করতে এসেছি। ওর একটা জিনিস তোমাকে দেওয়ার ছিল। কখন কি হয়ে যায় তাই এটা তোমায় দেবার জন্য আমায় পাঠাল অংশু।”

খামটা তিয়াসের হাতে দিয়ে আশীষ চলে গেল। তিয়াস দরজা বন্ধ করে ছুটে ওপরে নিজের ঘরে গেল। খামটা যত্ন করে খুলে দেখল। তার মধ্যে বাঁশের বানানো একটা আংটি আর এক জোড়া কানের দুল ছিলবাঁশের হলেও দেখতে গেলে সোনার থেকে মূল্য কিছু কম নয়। অংশু এগুলো অনেক দূর থেকে তিয়াসের জন্য এনেছিল কিন্তু এগুলো দেবার সুযোগ পায়নি, প্রায় এক বছর ধরে নিজের কাছে যত্ন করে রেখেছিল একদিন দেখা হবেই এই ভেবে। একটা ছোট্ট কাগজের টুকরোও ছিল খামের মধ্যেসেটা পড়তে পড়তে ভেতর থেকে কান্না বেড়িয়ে এল তার অজান্তেই। বুকে সেই উপহার, চিঠি সব একসাথে জড়িয়ে ধরে বালিশে মুখ ঢেকে কাদতে থাকল তিয়াস। তার মনে হল এক ছুট্টে অংশুর কাছে গিয়ে দেখা করে আসবে। কিন্তু তার মনে পড়ল আশীষ ওকে হাসপাতালের ঠিকানা বলে যায়নি, আর সেও জিগেস করেনি। নিজেকে বারে বারে দোষী মনে হতে লাগল তিয়াসের, সে নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলনা তিয়াসের কাছে অংশুর যে নাম্বারটা ছিল সেটাতে ফোন করল, কিন্তু এখনও সেই একই রেকর্ড বেজে চলেছে আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটি বন্ধ আছে…’ বারে বারে ফোন করতে থাকল তিয়াস এই ভেবে যদি একবার রিং হয়ে যায়

কিন্তু বারে বারে

আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটি বন্ধ আছে’
আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটি বন্ধ আছে’
আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটি বন্ধ আছে’
...



                                                                          সমাপ্ত





PREVIOUS CHAPTER





COPYRIGHT© : This story is written by Nilangshu Chatterjee and it’s his property . Copying this or doing anything without permission of Nilangshu Chatterjee will be treated as violation and Nilangshu Chatterjee has all rights to take legal step .  ** All the characters , names , places , dates , situations , incidents etc are imaginary . 

Related Posts:


0 comments:

Post a Comment

Join With Us

New philosophy of Poems of Love

New philosophy of Poems of Love
NIL KOBITAR KHOJE

Total Pageviews

12828

Followers

POET behind the popularity

POET behind the popularity
AWAKEN DREAM

Jawl Phoring By Anupam Roy Original Track

Popular Posts