Sunday, 24 July 2016



অধ্যায়


কবিতা লেখার সখটা বেশ ছোট থেকেই ছিল বয়েস যখন ৭ কংবা ৮ , ফরিং আর মৌমাছি নিয়ে বাবার লেখা এক কবিতা শুনে ভেতরের কবিত্বটা মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল অংশুর  , আর সুকুমার রায়ের কাতুকুতু বুড়ো ছড়ার অনুকরনে নাপিত ভোলা নাম দিয়ে একটা ছড়া লিখে বাবার কাছে প্রশংসিত হয়েছিল সেই সূত্র ধরে কবি মন আজ অনেকটাই বড় হয়ে গেছে , রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে ছেলেবেলার ছড়া এখন কবিতায় রুপান্তরিত করে ফেলেছে সে

নভেম্বর পেরিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মাঝামাঝি একদিন  দুপুরবেলা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে , কিন্তু আকাশে মেঘ নেই , একটু বেশিই রোদ আছে যেন রোদ আর বৃষ্টি দুজনের আকষ্মিক আলিঙ্গনে অংশু প্রথমে কিছুটা বিচলিত হয়ে পরে অবাক হয়ে দেখতে থকল বৃষ্টির জলে রোদের বিচ্ছুরিত আলো কবিতার খাতাটা কোলের ওপর রাখল পেনটা ওপরের কৃন্তক দাঁতে ঠেকিয়ে বৃষ্টির জলের সেই বিচ্ছুরন দেখতে দেখতে কিছু ভাবতে শুরু করল , হয়তো কবিতার নতুন লাইন তার মনের দরজায় টোকা দিচ্ছিল বেশ-কিছুক্ষন ভাবতে ভাবতে কিছু লিখবে বলে পেনটা খাতায় ঠেকিয়েছে  , ঠিক সেইসময় টেবিলে রাখা ফোনটার ভাইব্রেশন টেবিলের কম্পাঙ্কের সাথে মিলে যাওয়ায় বেশ জোড়ে আওয়াজ করে উঠল একটু বিরক্ত হলেও ফেসবুক এর মেসেজ এসেছে বুঝতে পেরে ধরফর করে খাট থেকে নেমে ফোনটা নিয়ে আবার খাটে এসে বসল

হুম রে কেনো চিনতে পারবনা , তুই অংশু …”

মেসেজ টা এসেছে তিয়াসের থেকে তাড়াতাড়ি করে নটিফিকেশন দেখল আর ভিষন খুশি হয়ে উঠল , তিয়াস ওর রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে ( আপনারা ভাবছেন হয়তো বাংলার মধ্যে ইংরাজি ক্যানও ব্যবহার করা হছে , আসলে এই ইংরাজি গুলো এখন বাংলাই হয়ে গেছে , এদের বাংলার পোষাক পরালে অনেকেই এদের চিনতে ভুল করতেন তাই এই কিছু অতি প্রচলিত ইংরাজিগুলো ইংরাজিই রাখলাম ) বাইরের দিকে তাকিয়ে অংশুর যেন মনে হল বৃষ্টিটা আরও জোরে পড়ছে , ইচ্ছে করল একটু ভিজে নিজের আনন্দটা বৃষ্টির সাথে ভাগ করে সিক্ত হয়ে নেবে কিন্তু মায়ের বকুনির কথা মনে পড়তেই এই পাগলামির ইচ্ছে থেকে নিজেকে বিরতই রাখল

অংশু উত্তর দিলবাঃ রে আমার নাম তো ফেসবুকে দেওয়াই আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছিস , এর মানে তুই যে আমায় চিনতে পেরেছিস সেটা কি করে বুঝব !! ”
সঙ্গে সঙ্গে তিয়াস হেসে উত্তর দিলআরে আমি তোকে সত্যিই চিনতে পেরেছি কেমন আছিস ? কি করছিস এখন ? কোথায় আছিস ? ”

এতো তাড়াতাড়ি উত্তর আসবে এটা অংশু একেবারেই ভাবেনি কারন অনলাইনের সবুজ বাতি নামের পাশে জ্বলছিলনা কিন্তু অংশুর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছিল এবং পুরনো ষ্মিতিচারন করছিল
দুপুর গড়িয়ে বিকেল , বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হল , ওদের কথোপকথন সাময়িক বন্ধ হলেও অংশু মনের ফেসবুক কোনমতেই অফলাইন করতে পারছিলনা  

সন্ধেবেলা মায়ের দেওয়া একটা কাজে বাইরে বেরোল সে , আজ অংশুর সাইকেল ঝড়ের বেগে চলছিলনা সাইকেলের বিলম্বিত চালনায় মৃদু হাওয়া অংশুর মুখের ওপর দিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছিলঅনেকদিন পরে হাওয়ার এই স্পর্শ অনুভব করছিল সে । কিচ্ছুক্ষন পর বাড়ি ফিরল , মা ছিল দরজাতে দাঁড়িয়ে । মাকে দেখে অংশু প্রচন্ড জোড়ে ব্রেক টিপে ধরল , সাইকেলের চাকাগুলো ঘোরা বন্ধ করল ঠিকই কিন্তু গতিজাড্যের অসীম কৃপায় ছেঁচড়ে গিয়ে থামল মায়ের পায়ের কাছে । মা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে কি হল জিগেস করল , কিন্তু অংশুর মৃদু স্বরে তার ভুলে জাওয়ার অকপট স্বীকারোক্তি মায়ের প্রশ্নটা থামিয়ে দিয়ে চোখে মুখে রাগের সঞ্চার করল । অংশু চুপচাপ সাইকেল টা ঘুরিয়ে হাসতে হাসতে আবার বাজারের পথে এগোল ।


স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে অংশু যখন কলেজের সীমানায় পা দিল , একদিকে প্রচন্ড উৎসাহের সঙ্গে অন্যদিকে এক নতুন জগতে প্রবেশ করার ভয় তাকে সন্ত্রস্ত করে রেখেছিল । স্কুলের দিন নেই , স্কুলের বন্ধু নেই , স্কুলের পরিবেশও নেই । সে একেবারে একা , নতুন একজন যে এই জগতের আদব কায়দার সাথে একেবারে অপরিচিত । সে শুনেছিল এখানে ইংরাইজীতে কথা বলতে হয় , বইও বাংলায় পাওয়া যায়না এবং সবথেকে বড় কথা এখানে ছেলে মেয়ে সবাই একসাথে পড়াশোনা করে  । এই শেষের কারন টা তাকে বেশি অস্বস্তি করছিল । কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে এমনভাবে গড়তে থাকল যে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিবেশের খুব পরিচিত একজন হয়ে উঠেছিল সে মেয়েদের সাথে কথা বলার জন্য তাকে আর সাহস অর্জন করতে হত না এবং খুব সাবলীল ভাবে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের বন্ধু হতে বা করতে সে কুন্ঠিত বোধ করতনা । আর বর্তমানের মনের অসুখের শুরুটা হয়েছিল এই কয়েক বছর পুরোন অতীতে ডিসেম্বরের ফাইনাল সেমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছিল কিন্তু সেই পরীক্ষা পরীক্ষার মত করে দেওয়ার বোধ অংশু হারিয়ে ফেলেছিল ।

আর ঠিক সেই সময় আরও কয়েকবছর পিছনের যে আশা সূপ্তাবস্থায় ছিল , যাকে  বিচ্ছিন্নতার দূরত্ব নিরাশার নিকোটিন দিয়ে তিলে তিলে প্রায় মেরেই ফেলেছিল , হঠাৎ মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে সে অংশুর সামনে এসে দাঁড়াল । পরীক্ষাটা মনের মত না হলেও অসুখের একটা পথ্য অংশু পেয়েছিল । যে চেতনা সে আগে আবিষ্কার করতে পারেনি সেই চেতনা আবিষ্কারের নেশা নতুন অতীত কে চাপা দিতে থাকল ।





PREVIOUS CHAPTER                                                                                                 NEXT CHAPTER

COPYRIGHT© : This story is written by Nilangshu Chatterjee and it’s his property . Copying this or doing anything without permission of Nilangshu Chatterjee will be treated as violation and Nilangshu Chatterjee has all rights to take legal step .  ** All the characters , names , places , dates , situations , incidents etc are imaginary . 

Related Posts:


1 comment:

Join With Us

New philosophy of Poems of Love

New philosophy of Poems of Love
NIL KOBITAR KHOJE

Total Pageviews

12954

Followers

POET behind the popularity

POET behind the popularity
AWAKEN DREAM

Jawl Phoring By Anupam Roy Original Track

Popular Posts