অধ্যায় – ২
কবিতা লেখার সখটা বেশ ছোট থেকেই ছিল
। বয়েস যখন ৭ কংবা ৮ , ফরিং আর মৌমাছি নিয়ে বাবার লেখা এক
কবিতা শুনে ভেতরের কবিত্বটা মাথাচারা দিয়ে উঠেছিল অংশুর , আর সুকুমার রায়ের ‘ কাতুকুতু বুড়ো ’ ছড়ার অনুকরনে ‘ নাপিত ভোলা ‘ নাম দিয়ে একটা ছড়া লিখে বাবার কাছে
প্রশংসিত হয়েছিল । সেই সূত্র ধরে কবি মন আজ অনেকটাই বড়
হয়ে গেছে , রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে ছেলেবেলার ছড়া এখন কবিতায় রুপান্তরিত
করে ফেলেছে সে ।
নভেম্বর পেরিয়ে ডিসেম্বরের প্রথম
সপ্তাহের মাঝামাঝি একদিন দুপুরবেলা
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়েছে , কিন্তু আকাশে মেঘ নেই , একটু বেশিই রোদ আছে যেন । রোদ আর বৃষ্টি দুজনের আকষ্মিক আলিঙ্গনে
অংশু প্রথমে কিছুটা বিচলিত হয়ে পরে অবাক হয়ে দেখতে থকল বৃষ্টির জলে রোদের বিচ্ছুরিত
আলো । কবিতার খাতাটা কোলের ওপর রাখল । পেনটা ওপরের কৃন্তক দাঁতে ঠেকিয়ে বৃষ্টির জলের সেই বিচ্ছুরন
দেখতে দেখতে কিছু ভাবতে শুরু করল , হয়তো কবিতার নতুন লাইন তার মনের দরজায় টোকা দিচ্ছিল । বেশ-কিছুক্ষন ভাবতে ভাবতে কিছু লিখবে বলে পেনটা খাতায় ঠেকিয়েছে , ঠিক সেইসময় টেবিলে রাখা ফোনটার ভাইব্রেশন টেবিলের কম্পাঙ্কের
সাথে মিলে যাওয়ায় বেশ জোড়ে আওয়াজ করে উঠল । একটু বিরক্ত হলেও ফেসবুক এর মেসেজ এসেছে
বুঝতে পেরে ধরফর করে খাট থেকে নেমে ফোনটা নিয়ে আবার খাটে এসে বসল ।
“হুম রে কেনো চিনতে পারবনা , তুই অংশু …”
মেসেজ টা এসেছে তিয়াসের থেকে । তাড়াতাড়ি করে নটিফিকেশন দেখল আর ভিষন খুশি হয়ে উঠল , তিয়াস ওর রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করেছে ( আপনারা ভাবছেন হয়তো বাংলার মধ্যে ইংরাজি
ক্যানও ব্যবহার করা হছে , আসলে এই ইংরাজি গুলো এখন বাংলাই হয়ে গেছে , এদের বাংলার পোষাক পরালে অনেকেই এদের
চিনতে ভুল করতেন তাই এই কিছু অতি প্রচলিত ইংরাজিগুলো ইংরাজিই রাখলাম । )। বাইরের দিকে তাকিয়ে অংশুর যেন মনে হল বৃষ্টিটা আরও জোরে পড়ছে , ইচ্ছে করল একটু ভিজে নিজের আনন্দটা
বৃষ্টির সাথে ভাগ করে সিক্ত হয়ে নেবে । কিন্তু মায়ের বকুনির কথা মনে পড়তেই
এই পাগলামির ইচ্ছে থেকে নিজেকে বিরতই রাখল ।
অংশু উত্তর দিল “ বাঃ রে আমার নাম তো ফেসবুকে দেওয়াই
আছে । তা তো দেখতেই পাচ্ছিস , এর মানে তুই যে আমায় চিনতে পেরেছিস
সেটা কি করে বুঝব !! ”
সঙ্গে সঙ্গে তিয়াস হেসে উত্তর দিল “ আরে আমি তোকে সত্যিই চিনতে পেরেছি । কেমন আছিস ? কি করছিস এখন ? কোথায় আছিস ? ”
এতো তাড়াতাড়ি উত্তর আসবে এটা অংশু একেবারেই
ভাবেনি কারন অনলাইনের সবুজ বাতি নামের পাশে জ্বলছিলনা । কিন্তু অংশুর প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর সে দিচ্ছিল এবং পুরনো ষ্মিতিচারন
করছিল ।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল , বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হল , ওদের কথোপকথন সাময়িক বন্ধ হলেও অংশু
মনের ফেসবুক কোনমতেই অফলাইন করতে পারছিলনা ।
সন্ধেবেলা
মায়ের দেওয়া একটা কাজে বাইরে বেরোল সে , আজ অংশুর সাইকেল ঝড়ের বেগে চলছিলনা । সাইকেলের বিলম্বিত চালনায় মৃদু হাওয়া অংশুর মুখের ওপর দিয়ে পেরিয়ে
যাচ্ছিল । অনেকদিন পরে হাওয়ার এই স্পর্শ অনুভব করছিল সে । কিচ্ছুক্ষন
পর বাড়ি ফিরল , মা ছিল দরজাতে দাঁড়িয়ে । মাকে দেখে অংশু প্রচন্ড জোড়ে ব্রেক টিপে
ধরল , সাইকেলের চাকাগুলো ঘোরা বন্ধ করল ঠিকই কিন্তু গতিজাড্যের অসীম কৃপায় ছেঁচড়ে
গিয়ে থামল মায়ের পায়ের কাছে । মা কিছু বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে কি হল জিগেস করল ,
কিন্তু অংশুর মৃদু স্বরে তার ভুলে জাওয়ার অকপট স্বীকারোক্তি মায়ের প্রশ্নটা থামিয়ে
দিয়ে চোখে মুখে রাগের সঞ্চার করল । অংশু চুপচাপ সাইকেল টা ঘুরিয়ে
হাসতে হাসতে আবার বাজারের পথে এগোল ।
স্কুল থেকে বিদায় নিয়ে অংশু যখন কলেজের সীমানায় পা দিল , একদিকে
প্রচন্ড উৎসাহের সঙ্গে অন্যদিকে এক নতুন জগতে প্রবেশ করার ভয় তাকে সন্ত্রস্ত করে
রেখেছিল । স্কুলের দিন নেই , স্কুলের বন্ধু নেই , স্কুলের পরিবেশও নেই । সে
একেবারে একা , নতুন একজন যে এই জগতের আদব কায়দার সাথে একেবারে অপরিচিত । সে
শুনেছিল এখানে ইংরাইজীতে কথা বলতে হয় , বইও বাংলায় পাওয়া যায়না এবং সবথেকে বড় কথা
এখানে ছেলে মেয়ে সবাই একসাথে পড়াশোনা করে
। এই শেষের কারন টা তাকে বেশি অস্বস্তি করছিল । কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই
নিজেকে এমনভাবে গড়তে থাকল যে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিবেশের খুব পরিচিত একজন হয়ে উঠেছিল
সে । মেয়েদের সাথে কথা বলার জন্য তাকে আর সাহস অর্জন করতে হত না
এবং খুব সাবলীল ভাবে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের বন্ধু হতে বা করতে সে কুন্ঠিত বোধ
করতনা । আর বর্তমানের মনের অসুখের শুরুটা হয়েছিল এই কয়েক বছর পুরোন অতীতে । ডিসেম্বরের
ফাইনাল সেমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছিল কিন্তু সেই পরীক্ষা পরীক্ষার মত করে
দেওয়ার বোধ অংশু হারিয়ে ফেলেছিল ।
আর ঠিক সেই সময় আরও কয়েকবছর পিছনের যে আশা সূপ্তাবস্থায় ছিল
, যাকে বিচ্ছিন্নতার দূরত্ব নিরাশার
নিকোটিন দিয়ে তিলে তিলে প্রায় মেরেই ফেলেছিল , হঠাৎ মৃত্যুশয্যা থেকে উঠে সে অংশুর
সামনে এসে দাঁড়াল । পরীক্ষাটা মনের মত না হলেও অসুখের একটা পথ্য অংশু পেয়েছিল । যে
চেতনা সে আগে আবিষ্কার করতে পারেনি সেই চেতনা আবিষ্কারের নেশা নতুন অতীত কে চাপা দিতে থাকল
।
PREVIOUS CHAPTER NEXT CHAPTER
COPYRIGHT© : This story is written by Nilangshu Chatterjee and it’s his property . Copying this or doing anything without permission of Nilangshu Chatterjee will be treated as violation and Nilangshu Chatterjee has all rights to take legal step . ** All the characters , names , places , dates , situations , incidents etc are imaginary .
PREVIOUS CHAPTER NEXT CHAPTER
COPYRIGHT© : This story is written by Nilangshu Chatterjee and it’s his property . Copying this or doing anything without permission of Nilangshu Chatterjee will be treated as violation and Nilangshu Chatterjee has all rights to take legal step . ** All the characters , names , places , dates , situations , incidents etc are imaginary .
daur ho6a vai chali ja....
ReplyDelete